নয়াকৃষিঃ ভার্মি কম্পোস্টে স্বচ্ছলতা ফিরেছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাহবুব মল্লিকের। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের চরআত্রা গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব মল্লিক। জন্মলগ্ন থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। দুই ছেলে- মেয়েকে নিয়ে তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৪জন।
পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ২টি টিনের ঘর আর চাষাবাদের জন্য ৮ শতক জমি ছাড়া মাহবুব মল্লিকের নিজস্ব সম্বল বলতে আর কিছুই নেই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্যের মাঠে বা দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন এমন সুযোগও নেই তার। একমাত্র স্ত্রী এসডিএস এর অফিসে বুয়া/বাবুর্চি হিসেবে মাসে যে ৫/৬ হাজার টাকা পান তাই দিয়েই তাদের ৪’সদস্যের সংসার চলে। কাঙিখত আয়-রোজগার না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের। ইচ্ছা থাকলেও কখনো ভালো পোশাক বা খাবার কিনে খাওয়ার সাধ্য নেই তাঁদের। তদুপরি দুই সন্তানের লালন-পালন এ দম্পতির জন্য দিনে দিনে কঠিন হয়ে পড়ে।
২০১৭ সালের মে মাসে দাতা সংস্থা IFAD এর অর্থায়নে ও পিকেএসএফ এর কারিগরী সহায়তায় এসডিএস বাস্তবায়নে চরআত্রা অঞ্চলে Promoting Agricultural Commercialization and Enterprises (PACE) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এসডিএস-এ চাকুরির সুবাদে এ প্রকল্প সম্পর্কে জানেন মাহবুব মল্লিকের স্ত্রী।এরপর স্ত্রীর পরামর্শে প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ সবজি চাষী দলের সদস্য হন মাহবুব মল্লিক।এরপর তাকে প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহী হন তিনি। তার আগ্রহ ও পারিবারিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে তাকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য দুইটি চারি/রিং এবং কিছু কেঁচো কিনে দেয়া হয়।

প্রথম অবস্থায় তাঁর মাসে ৪০-৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত এসব সার তিনি নিজের জমিতে ব্যবহার করতে থাকেন। ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি অন্যান্য কৃষকের নজরে এলে তারা ভার্মি কম্পোস্টের ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং কৃষকেরা তার কাছে ভার্মি কম্পোস্ট খোঁজ করতে শুরু করেন। সারের প্রতি অন্যান্য কৃষকদের আগ্রহ দেখে তিনি নিজ উদ্যোগে আরও তিনটি চারি যুক্ত করে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। বাঁশের চাটাই ও পলিথিন দিয়ে ছাউনি করে দেন। এতে তার সব মিলে প্রায় ৫’হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
মাহবুব মল্লিকের এখন মাসে ১০০-১২০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হয়। ১২টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য ১৪০০-১৫০০ টাকা। এ পযর্ন্ত তিনি ৯ বার সার সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে নিজে কিছু ব্যবহার করেছেন আর বিছু সার অন্যের কাছে বিক্রি করে ৭৮০০ টাকা আয় করেছেন। অন্য দিকে উৎপাদিত সারের পাশাপাশি তিনি ৫,০০০ কেঁচো বিক্রয় করে আরও প্রায় ৪,০০০ টাকা আয় করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের আয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি এখন তাদের পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে অন্ধ মাহবুব মল্লিকের এমন সফলতা দেখে ঐ এলাকায় অনেকেই এখন নিজ উদ্যোগে বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করছেন। ভার্মি কম্পোস্ট এর ব্যবহার বৃদ্ধির কারনে চরআত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা উল্ল্যেখযোগ্য হারে কমেছে পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কমায় আয়বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা ছিলো শুধু মাত্র রাসায়নিক সার নির্ভর সেখানে বর্তমান চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাহবুব মল্লিক এখন স্বপ্ন দেখেন বিভিন্ন বাজারের সারের দোকানে তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট প্যাকেট আকারে বিক্রয় হবে। বাজারজাতকরণ এবং তার ভার্মি কম্পোস্ট সম্প্রসারণে তিনি চঅঈঊ (পেইস) প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।