নয়াকৃষি: বাংলাদেশে জনশক্তির প্রায় ৪৫.১% লোক কৃষিতে নিয়োজিত (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫) বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে কৃষি এক বিশাল ভুমিকা পালন করছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৮ম এবং এশিয়ার মধ্যে ৫ম। কৃষির অন্যতম উপ-খাত হলো শাক-সবজি উৎপাদন। সবুজ বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশে ক্রপিং ইনটেনসিটি ১৯৭০ সালে যেখানে ১৪৫% ছিল তা বর্তমানে প্রায় ১৯৪%। এছাড়া শাক-সবজির উৎপাদন প্রায় ৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে যা বাংলাদেশকে পৃথিবীর ৩য় শাক-সবজি ঋৎপাদন বৃদ্ধির দিক দিয়ে নিয়ে এসেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও কৃষকরা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে অনেক সময়ই নায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারছেন না।
শাক-সবজি দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও অত্যাবশ্যকীয় কিছু মাইক্রোনিউট্রেন্ট সরবরাহ করে। শাক-সবজি উৎপাদনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা হলো রোগ ও পোকার আক্রমন। রোগ-পোকা বালাই এককভাবে শাক-সবজির ফলন ২৫% কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশের কৃষকরা এসব বালাই দমনের জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের উপর নির্ভরশীল। বালাইনাশকের অযাচিত ও যথেচ্ছ ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১৯৯৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত বালাইনাশকের ব্যবহার বেড়েছে ৩২৮.৪% এবং হেক্টর প্রতি ব্যবহার বেড়েছে ৫৯৮.৪%, যদিও এসব বালাইনাশকের ৮০% ব্যবহার হয় ধান চাষে কিন্তু প্রতি একক জায়গায় ধানের তুলনায় সবজিতে বালাইনাশকের বারংবার ব্যবহার ও পরিমাণ বেশী।
জৈব কৃষি এমন একটি আদর্শ পদ্ধতি, যা প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বিত ও টেকসই। জৈব কৃষি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী পুরুষের পারস্পারিক নির্ভরশীলতাও সৃষ্টি করে। জৈব কৃষি পদ্ধতিতে মাটি সব সময় উর্বর থাকে এবং এই উর্বরতা উত্তর উত্তর বাড়তে থাকে। জৈব কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় সবজি উৎপাদন ও প্রাণিসম্পদ পালন কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে:
১. পরিবেশগতভাবে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি,ফসল ও সবজি উৎপাদনকারী সদস্যদের নিয়ে উন্নত ব্যবস্থাপনা চর্চার উপর প্রশিক্ষণ
২. পরিবেশ গতভাবে স্বাস্থ্যসম্মত প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান
৩. প্রকল্প কর্মকতাদের ইকোলজিক্যাল ফার্মিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ
৪. জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে উচ্চমূল্যের সবজি চাষ প্রযুক্তি চালুকরণ প্রর্দশনী
৫. প্রাকৃতিকভাবে চরাঞ্চলে সবজি চাষ প্রযুক্তি চালুকরণ প্রর্দশনী
৬. কৃমিনাশক ও ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইন
৭. কম্পোস্ট সার উৎপাদনের প্রদর্শনী
৮. ফসল/পণ্য সংগ্রহ, গ্রেডিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ
৯. কালেকশন, গ্রেডিং ও প্রসেসিং সেন্টার স্থাপনে সহায়তা
১০. পরিবেশগতভাবে উৎপাদিত সবজি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন
১১. সবজি উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন
১২. কৃষকদের প্রকৃতিকভাবে ফসল উৎপাদন ও প্রাণিসম্পদ পালন বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন
১৩. প্রাকৃতিকভাবে চাষের উপকরণ প্রস্তুতকরনের বানিজ্যিক উদ্যোগে সহায়তা (ট্রাইকো-কম্পোষ্ট উৎপাদন)
১৪. দেশি বীজের নার্সারি স্থাপন
১৫. মাঠ দিবস প্রভৃতি
সফলতার কারণ/বিশেষ উদ্যোগঃ
১. এসডিএস কৃষকের দ্বার গোড়ায় গিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ পরবর্তী মরিটরিং।
২. প্রকল্প এলাকায় এলএসপি এবং উপজেলা প্রণীসম্পদ কর্মকর্তাদের সাথে উদ্যোক্তাদের সংযোগ স্থাপন করা।
৩. আগ্রহী কৃষকদেরকেই ইকোলজিক্যাল পদ্ধতি অনুসরন করতে প্রযুক্তিগত সহযোগীতা করা হচ্ছে। ভোক্তাদের ইকোলজিক্যাল পণ্যের গুনাগুণ বুঝানোর ফলে বেশি দামে কিনতে আগ্রহী।
৪. যাদের বাড়িতে নিজস্ব গরু আছে তাদেরকেই ভার্মি-কম্পোস্ট/অনুজীব সার উৎপাদন প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
৫. যে কৃষক আগে থোকেই চারা উৎপাদনে পারদর্শী তাকেই আমরা দেশী বীজের নার্সারী প্রর্দশনীর জন্য নির্বাচন করি।
৬. যাদের বাড়িতে নিজস্ব গরু আছে তাদেরকেই ট্রাইকো-কম্পোষ্ট উৎপাদন প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
৭. জিও-ফেন্সিং এর জন্য প্রকৃত সবজি চাষী এবং বন্যামুক্ত জমি নির্বাচন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি হলেও গুনগত মান এবং রাসায়নিক মুক্ত সবজি পাওয়া যায়।
শিক্ষনীয়
১. ইকোলজিক্যাল/প্রাকৃতিক কৃষি সম্পর্কে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে যা প্রকল্প শুরুর আগে ছিল না।
২. একই জমিতে একই সাথে একাধিক ফসল চাষ আবাদ সম্ভব তার একটি ধারনা সৃষ্টি হয়েছে প্রকল্প এলাকার কৃষকদের মাঝে।
৩. এক ফসলের রক্ষাকারী যে অন্য ফসল হতে পারে তা কৃষকদের মাঝে ধারনার সৃষ্টি করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে প্রকল্প এলাকার কৃষকদের সার, কিটনাশক ছাড়া সবজির চাষ সম্ভব তারাদের জানা ছিলো না।
৪. জিও-ফেন্সিং এর মাধ্যমে প্রাথমিক ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি হলেও গুনগত মান এবং রাসায়নিক মুক্ত সবজি পাওয়া যায়।