নয়াকৃষি: তরুণ উদ্যোক্তা শফিক মন্ডল শরিফা চাষে আশাতীত সফলতা পেয়েছেন। ৫ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে ১০ লাখ টাকারও বেশি শরিফা বিক্রি করেছেন। ঝিনাইদহ জেলায় এটাই বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বড় শরিফা ফলের বাগান। বাগানে শরিফার পাশাপাশি রয়েছে ড্রাগগন, মাল্টা ও পেয়ারার চাষ। ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা থেকেই বিলুপ্তপ্রায় শরিফা চাষ শুরু করেন শফিক।
সম্প্রতি তার বাগানে গিয়ে দেখা যায় থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে শরিফা ফল। সুস্বাদু ফল হিসেবে পরিচিত শরিফা চাষে লাভবান হয়েছেন। তার এই সফলতা এলাকার তরুণ যুবকদের জন্য এখন আদর্শ ও অনুকরণীয় হিসেবে বিবেচিত।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মানিকদিহি গ্রামের মন্ডল পরিবারের সন্তান শফিক। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। প্রথমে তিন বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেন। পরে স্থানীয় এক কৃষকের পরামর্শে ২০১৪ সালে ৫ বিঘা জমিতে ৫০০ শরিফা ফলের চারা রোপণ করেন। প্রথম বছর চারা ক্রয়, রোপণ ও পরিচর্যায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়।
এরপর ২০১৮ সালে প্রথম ফল আসে। ওই বছর এক লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি লাভবান হওয়ায় আরও জমিতে এই চাষ সম্প্রসারণ করার চিন্তা করছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও নিজের পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন এ শরিফা ফলের বাগান।
শফিক মন্ডল জানান, শরিফা ফল গাছ প্রতি বিঘায় ১০০টি করে লাগানো যায়। তিন বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু করে। মূলত শরিফা গাছে তেমন কোনো যত্ন লাগে না। চৈত্র মাসের দিকে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং আষাঢ় মাসের দিকে ফল বিক্রি শুরু হয়। ৫ বছরের একটি গাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়।
বর্তমানে যেসব ফল চাষ হয় তার মধ্যে শরিফা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি এবং ভালোমানের ফল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে নিয়ে যান। তরুণ এই চাষি আরও জানান, শরিফা গাছ যারা লাগাবেন তারা ভালো জাতের বীজ থেকে উৎপাদিত চারা লাগালে ফলন ভালো পাবেন।
গত ৮ বছরে ফল চাষ করে ৪০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে ঘর তৈরি করেছেন। প্রথম দিকে পেয়ারা চাষের সঙ্গে সাথী ফসল, পেঁয়াজ, রসুন চাষে সফল হন। পর্যায়ক্রমে ড্রাগন, মাল্টা ও শরিফা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বাগান মালিক শফিক মন্ডল জানান, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যেত সুস্বাদু ফল শরিফা। এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন কেউ এ ফলের গাছ রোপণ করেন না। বিলুপ্ত প্রায় এ ফলের গাছ ধরে রাখা ও বাণিজ্যিকভাবে বাগান করেছেন। স্বল্প খরচ আর অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় স্থানীয় চাষি ও তরুণরা শরিফা বাগানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা জানান, শরিফা ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও ঢাকায় পাঠানো হয়। অনলাইনেও এর বেচাকেনা হয়।
কোটচাাঁদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মহাসিন আলী বলেন, শরিফা একটি বিলুপ্তপ্রায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। এ ফল চাষে খরচ কম। রোগবালাই একেবারে নেই বললেই চলে। অথচ লাভ অনেক বেশি। এ ফল চাষে সম্প্রসারণ ঘটলে পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পূর্ণ হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএমএফ/এএসএম