কৃষিডেস্ক: বানিজ্যিক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে স্বাবলম্বী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর প্রামাণিক। তাহার বয়স ৪৯ বছর। পরিবারের তিন ছেলে মেয়েসহ মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ২০১৭ সালের মে মাসে চরআত্রা অঞ্চলে দাতা সংস্থা IFADএর অর্থায়নে ও পিকেএসএফ এর কারিগরী সহায়তায় এসডিএস এর মাধ্যমে Promoting Agricultural Commercialization and Enterprises (PACE)প্রকল্পটি শুরু হলে কৃষক জাহাঙ্গীর প্রামাণিক এ প্রকল্পের কৃষকদলের একজন সদস্য হন।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর প্রামাণিক নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষ সম্পর্কে জানেন এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারণ ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি তার জমিতে প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন। এতে করে তার যেমন টাকা খরচ হতো, তেমনি জমির উৎপাদন কমতে থাকে। এরপর কিছুদিন পর প্রকল্পের প্রশিক্ষণ শুরু হলে তিনি ওখান থেকে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারনা লাভ করেন। চাষ করতে গিয়ে তিনি তার জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেন এবং ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের কারনে তার উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং জমি পূর্বাপেক্ষা উর্বর হয়েছে বলে তার নিকট প্রতীয়মান হয়।
প্রকল্পের সহায়তায় ২০১৮ সালের মে মাসে কৃষক জাহাঙ্গীর প্রামাণিক ২ টি রিং, পলিথিন ও কেঁচো নিয়ে নিজের বাড়িতেই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন । প্রথম অবস্থায় মাসে ২৫-৩০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদিত হতো যা তিনি তার নিজের জমিতে ব্যবহার করতেন। ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি অন্যান্য কৃষকের নজরে এলে তারা ভার্মি কম্পোস্টের ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং কৃষক তার নিকট ভার্মি কম্পোস্ট খোঁজ করতে থাকেন। এর ফলে কৃষক জাহাঙ্গীর প্রামাণিক তখন নিজ উদ্যোগে আরো ২ টি রিং নিয়ে মোট ৪ রিং এ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। এর পর তিনি ২০১৯ সালে প্রকল্পের সাহায্যে ১০ ফুট ১০ ফুট ২ ফুট সাইজের ইট বালি ও সিমেন্ট দিয়ে ২ প্রকোষ্ঠ সাইজ পাকা হাউজ তৈরী করেন। ছাউনি হিসাবে ত্রিপাল ও বাশেঁর খুটি ব্যবহার করেন। এতে করে তার ১৫০০০ টাকার মতো খরচ হয়।
বর্তমানে কৃষক জাহাঙ্গীর প্রামাণিক মাসে ৩০০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে থাকেন। যার বাজার মূল্য ৩৬০০ টাকা। এ পযর্ন্ত তিনি ৯ বার সংগ্রহ করেছেন। ৪ বার নিজে ব্যবহার করেছেন আর ৫ বারের সার অন্যের কাছে বিক্রি করে ১৮০০০ টাকা আয় করেছেন। অন্য দিকে উৎপাদিত সারের পাশাপাশি তিনি ১০০০০ কেঁচো বিক্রয় করে ৫০০০ টাকা আয় করে থাকেন। তার দেখাদেখি অত্র এলাকায় অনেক কৃষকই এখন নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। ভার্মি কম্পোস্ট এর ব্যবহার বৃদ্ধির কারনে চরআত্রা গ্রামে কৃষকরা রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা উল্ল্যেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। আগে যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থা ছিলো শুধু মাত্র রাসায়নিক সার নির্ভর সেখানে বর্তমান চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। তিনি এখন স্বপ্ন দেখেন বিভিন্ন বাজারের সারের দোকানে অচিরেই তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট প্যাকেট আকারে বিক্রয় হবে। বাজারজাতকরনের ব্যাপারে তিনি চঅঈঊ (পেইস) প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।