এম আব্দুল মান্নান: বাস্তবায়নকারী উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) এর উদ্যোগে কমার্শিয়ালাইজেশন অব বায়োফর্টিফাইড ক্রপস (সিবিসি) প্রকল্পের আওতায় জিংক ধানের বীজ বিক্রেতাদের সাথে বাজারজাতকরণ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টায় এসডিএস’র সভাকক্ষে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর জেলার উপ-পরিচালক মোঃ মতলুবর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এসডিএস’র কৃষি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, হারভেস্ট প্লাস এর সিবিসি প্রকল্পের বিভাগীয় সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন, শরীয়তপুর জেলা সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডিএস’র পরিচালক (এমএফ) বিএম কামরুল হাসান বাদল।
শরীয়তপুর জেলা সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা কামাল এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-পরিচালক মোঃ মতলুবর রহমান বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে। এখন ধান, গম, ভূট্রা, পাট উৎপাদন বাংলাদেশে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ভারত,পাকিস্তানের গড় প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে বেশি। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলেই সম্ভব হয়েছে এই বিপুল উন্নয়ন। এর ভিত্তি রচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশকে সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দেশের কৃষিক্ষেত্রে তিনি যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তার অন্যতম ছিল ভূমি সংস্কার। কৃষির সম্প্রসারণে তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির সব খাজনা মওকুফ করেন। ফলে কৃষির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের প্রচেষ্টায় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়; সহজ ও সুলভ করা হয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ; পানি সেচ সম্প্রসারিত করা হয়; অনেকটাই নিশ্চিত করা হয় কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায়সংগত মূল্য। এতে বেড়ে যায় কৃষির সার্বিক উৎপাদন। বাংলাদেশ এখন খাদ্যশস্যের উৎপাদনে প্রায় স্বয়ম্ভর। পরনির্ভরতা অনেকটাই কম। ধানের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে আমাদের স্থান সবার ওপরে। কৃষিবিদ, কৃষকের বিভিন্ন কার্যক্রমের সফল ধারাবাহিকতায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রথম, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয়, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারনে অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর একটা প্রভাব পড়েছে। যার কারণে সার,তেলে কিছুটা দাম বাড়লেও তারপরেও সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে। এই যুদ্ধে যদি না থামে তাহলে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার আশংকা তৈরি হবে। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে এবং অর্থনীতির উপর চাপ কমে আসবে।
অন্যান্য বক্তারা জিংক ধানের পুষ্টিগুণ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং মিল মালিকদের জিংক ধানের আলাদা প্যাকেটজাত করণের উপর গুরত্বারোপ করেন।
আলোচনা সভায় শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ধান বীজ, চাল ব্যবসায়ী, কীটনাশক বিক্রেতা, এসিআই ও সুপ্রিম সীডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকেরা অংশ গ্রহন করেন।