নয়াকৃষি: আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে জমিজমা ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে চাষের জামি খণ্ড খণ্ড হচ্ছে। এ কারণে জমিতে আইলের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে অনেক জমি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে আইলের জমি চাষের আওয়তায় নিয়ে আসা যায়।
অনেক কৃষকই আয় বৃদ্ধি ও সবজির চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি দেশের জমির আইলগুলোকে সবজি চাষের আওতায় নিয়ে আসছেন। বর্তমান চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে জমির আইলে সবজি চাষ হচ্ছে।
মাঝারি উঁচু ও উঁচু জমির আইলে সারা বছর সবজি চাষ করা যায়। বন্যা বা অতিবৃষ্টিতে ডুবে যায় এমন আইল সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে মূল ফসল যেমন, ধানের কোনো ক্ষতি হয় না।
আইলে যেসব সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিম, বরবটি, ঢ্যাঁড়শ, লাউ, পুঁইশাক, গিমা কলমি, কাঁকরোল, টমেটো, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কুমড়া, সরিষা ইত্যাদি।
আইলে সবজি চাষের সময় প্রধান ফসল অর্থাৎ ধান রোপণের সঙ্গে মিল রেখে আইলে সবজি রোপণ করতে হয়। চাষের জন্য আইলকে পরিষ্কার করে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। যেসব সবজি ছিটিয়ে বোনা হয় সেগুলোর বীজ আইলের উপর বপন করতে হবে। আর যেগুলো গর্তে রোপণ করা হয় সেগুলোর জন্য গর্ত করতে হবে।
ধানের বীজতলা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পলিব্যাগে সবজির চারা তৈরি করে নিতে হবে। জৈব ও অজৈব সার মিশিয়ে সুস্থ ও সবল চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
আইলকে সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে নিতে হবে। এতে মাটির রস অনেকদিন ধরে রাখে। প্রয়োজন অনুযায়ী অনুমোদিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। লতা জাতীয় সবজিতে জাংলা দিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সবজিতে সেচ না দিলে আশানুরূপ ফলন নাও পাওয়া যেতে পারে।
আইলের সবজিতে বিভিন্ন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সবজির এসব বালাইকে আইপিএম দিয়ে দমন করতে হবে। আইলে রঙিন ফুল জাতীয় সবজি চাষ করলে ধানের ক্ষতিকর পোকা পরজীবী বোলতারা এসব ফুলে আশ্রয় নেবে।
ফলে বোলতাদের বংশ বিস্তার ও সংরক্ষণ হবে। এ সকল বোলতা ধান ফসলের ক্ষতিকর পোকার ডিম, কীড়া, পুত্তলী ও পূর্ণাঙ্গকে পরজীবিতা করে বিনষ্ট করবে। সেক্ষেত্রে কৃষকদের বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করার তেমন প্রয়োজন হবে না।
আইলে সবজি চাষ করে কৃষক তার চাহিদা মেটাতে পারবে এবং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করতে পারবে। এতে কৃষকের আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।
এমএমএফ/জেআইএম