যোবায়ের ইবনে আলী, হাবিপ্রবি: বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনে বায়োফার্টিলাইজার (এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগে সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজিজুল হক হেলাল এর নেতৃত্বে হাবিপ্রবির একদল গবেষক শিক্ষার্থী এজাতীয় বায়ো ফার্টিলাইজারের (ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগে তিন থেকে চারগুন বেশি এবং প্রায় শতভাগ বিষমুক্ত বেগুনের ব্যাপক ফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।
জমিতে সার এবং কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যাকটেরিয়া ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বেগুনের ওপর গবেষণা চালায় গবেষক দলটি এবং পরবর্তীতে অবাক করা সাফল্যের দেখা পান তাঁরা । সাধারণত একজন কৃষক জমিতে প্রতি শতকে যতোটুকু ইউরিয়া সার ব্যাবহার করেন তার ৭০ শতাংশ ব্যাবহার কমানো যায় এতে। আক্রমনকারী বেগুন ছিদ্র করতে আসা পোকাকেও বাধা দেয় এই বায়ো ফার্টিলাইজার (ব্যাকটেরিয়া)।
এদিকে, বায়োফার্টিলাইজার (ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগের ফলে জমিতে কীটনাশকের ব্যাবহারের পরিমান প্রায় শুন্যের কোঠায় এনেছেন তাঁরা। এর প্রয়োগে বেগুনের ফলন এবং আকারের পরিবর্তন লক্ষনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে গ্রোথ মিডিয়া তৈরী করে এজাতীয় ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. আজিজুল হক হেলাল।
হাবিপ্রবির কৃষি গবেষণা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বায়ো ফার্টিলাইজার (ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগ করা বেগুন গাছের আকৃতি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা বেগুন গাছের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিন গুন বেশি বড় আকারের এবং এই গাছগুলো তিন থেকে চার গুন বেশি ফলন দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়োক্যামেস্ট্রী এন্ড মলিকিউলার বিভাগের এমএসসির শিক্ষার্থী আব্দুল আল কাইয়ুম বলেন,আমরা কয়েক জন শিক্ষার্থী আজিজুল হক হেলার স্যারের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা শুরু থেকেই বেগুন,টমেটো এবং ধান নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথম ধাপে আমরা ভালো ফলাফল পাওয়ার পর, পরবর্তীতে স্যারের তত্ত্বাবধানে পুনরায় বেগুন নিয়ে বিষদ আকারে গবেষনার সুযোগ পাই এবং এতে ভালো ফলাফল পাই। আশা করছি, শুধুমাত্র বায়ো ফার্টিলাইজার (ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগ করে জমিতে কৃষকরা ব্যাপক আকারে লাভবান হবে।
এবিষয়ে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. আজিজুল হক হেলাল বলেন, বায়োফার্টিলাইজার (ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগের ফলে বেগুন গাছের অসাধারণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। আমরা ৩৬ টি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থেকে ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন কনর্সোটিয়াম তৈরী করেছি যার প্রয়োগে বেগুন গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত, বিষের প্রয়োগ কমানো ও প্রায় তিন গুন বেশি উৎপাদন হয়। এ ধরনের বায়ো ফার্টিলাইজার প্রয়োগে কৃষক পর্যায়ে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করা গেলে দেশে অসংক্রামক রোগ অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এই গবেষণা থেকে পাওয়া নতুন নতুন তথ্য পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণার জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. আজিজুল হক হেলাল।