এম আব্দুল মান্নান, নয়াকৃষি: বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’-এর সমন্বিত জরিপে চলতি বছরের গত ১ অক্টোবর এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় দুটি ধাপে সেরা গবেষক নির্ধারণ করা হয়। এর একটি হল পুরো পেশাগত জীবনের ওপর, আরেকটি শুধু এক বছরের গবেষণা কর্মের ওপর।
বিজ্ঞানীর প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়। ওই প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণীবদ্ধ করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।এতে বাংলাদেশ থেকে মোট সেরা গবেষকের সংখ্যা ১৭৭ জন। এই তালিকায় দ্বিতীয়বার স্থান পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি ২০২১ সালেও এলসিভিয়ার ও স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের প্লস বায়োলজিতে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের ডাটাবেস সম্পর্কিত এক প্রবন্ধে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের একজন এবং বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি, কৌলিতত্ত্ব এবং অণুপ্রাণবিজ্ঞানে দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর স্থান লাভ করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি জীবপ্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক (গ্রেড-১) ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম একজন বিখ্যাত ফুলব্রাইট স্কলার। তিনি ২০ ডিসেম্বর ১৯৬৬ সালে বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি (বিজ্ঞান) উভয় ক্ষেত্রে প্রথম বিভাগ ও বাকৃবি-ময়মনসিংহ হতে বিএসসিএজি (অনার্স) এবং এমএসসি (এজি) উভয় ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন (স্বর্ন পদক জয়ী) করেন। তিনি হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান থেকে ডিস্টিংশনসহ এমএস ও পিএইচ ডি (কৃষি জীবপ্রযুক্তি) সম্পন্ন করেন এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ (২০১৭-২০১৮) তে পোস্টডক্টরাল ফেলো ও ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কাজ করেন। তিনি আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ডট ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব গর্টিংগেন, জার্মানি (২০০৭-২০০৯); কমনওয়েলথ ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম, যুক্তরাজ্য, জেএসপিএস ফেলো এবং ভিজিটিং প্রফেসর, হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি (২০০৩-২০০৫), গিফু ইউনিভার্সিটি (২০১৫), কোবে ইউনিভার্সিটি (২০২৩-২০২৪), জাপান এ কাজ করেন। এছাড়া তিনি আমেরিকান ফাইটোপ্যাথোলজিক্যাল সোসাইটি (এপিএস-ইউএসএ) এর নির্বাচিত প্রথম বাঙালী ফেলো এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস, দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সেস (ইটালি), বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস এর ফেলো হিসেবে কাজ করছেন।
অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ দেশে-বিদেশে অনেক পুরষ্কার, গোল্ড মেডেল এবং এওয়ার্ড লাভ করেন। তন্মধ্যে, জীববিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক-২০১১ (২০১৪ সালে প্রদত্ত), আইডিবি ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৮, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০১৭, জীবন রহস্য বিশ্লেষণ পূর্বক গমের ব্লাস্ট রোগের উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ের জন্য কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট থেকে কমনওয়েলথ ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৯, কেআইবি বেস্ট প্রেজেন্টার পুরস্কার-২০১৬, কৃষি বিজ্ঞানে মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দু’বার (২০০৪ এবং ২০০৭) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক গবেষণা এওয়ার্ড এবং জাপানের জেএসবিবিএ শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানী পদক-২০০৩ লাভ করেন।
তাঁর আন্তর্জাতিক মানের মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ ৩৫০এর অধিক গবেষণা প্রবন্ধ এবং কিছু প্যাটেন্টস রয়েছে। গুগল স্কলারে তাঁর সাইটেশন ১০,৫০০ এর অধিক এবং তিনি দেশে জীবপ্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশলে সর্বোচ্চ এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডাটাবেস অনুযায়ী পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ১৯ বিজ্ঞানীদের একজন। গমের মহামারী ব্লাস্ট রোগ দ্রুত নির্ণয়ের জন্য তিনি নতুন একটি কিট আবিষ্কার করেন। যা বর্তমানে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক অর্থায়নে এশিয়া এবং আফ্রিকায় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগের কাজ চলছে। এছাড়া বারোমাসী কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচন, জাতীয় মাছ ইলিশের অস্ত্রের অণুজীব এবং প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার, ধানে সার সাশ্রয়ী বায়োফার্টিলাইজার উদ্ভাবন। ৫০টি নতুন বায়োএকটিভ ন্যাচারাল প্রোডাক্টস আবিষ্কারসহ কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।