নয়াকৃষি ডেস্ক: ছাগল পালনের জন্য আমাদের দেশের আবহওয়া বেশ উপযোগী। তাই অনেক বেকার তরুণ-যুবকরা বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য ছাগল পালনে এগিয়ে আসছেন। তবে বাণিজ্যিভাবে ছাগল পালন বা খামার দিতে হলে এর আগে বেশ কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে।
বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালনের জন্য সর্ব প্রথমে ভালো জাতের ছাগল নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২টি ছাগল নিয়ে খামার শুরু করাই উত্তম। অল্প সংখ্যক ছাগল নিয়ে শুরু করলে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় সম্পর্কে হাতে কলমে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
আর এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যদিকে ছাগল নির্বাচনের সময় ছাগলের বয়সের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে দুই মাস থেকে ছয় মাস বয়সী ছাগল ভালো হতে পারে। কারণ এই বয়সী ছাগলের বাজার দাম তুলনামূলক কম।
পাশাপাশি ছাগলের বয়স কম হলে বিক্রির উপযুক্ত হওয়া বা প্রজননের আগে দীর্ঘ সময় ধরে খামারের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আর ছাগলের বাচ্চা অবশ্যই কোনো দুগ্ধ উৎপাদনকারী ছাগলের খামার থেকে সংগ্রহ করবেন না। কারণ তারা বেশির ভাগ সময় তাদের খামারের সবচেয়ে নিম্নমানের ছাগলগুলোই বিক্রি করে থাকে।
তাছাড়া প্রতি ৮ থেকে ১০টি ছাগলের বিপরীতে একটি ভালো জাতের পাঠা রাখা যেতে পারে। এতে ছাগলের প্রজনন সহজ হবে। ছাগল লালন পালনজনিত ব্যয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
ছাগলের দাম কেমন হতে পারে সেটি জানার জন্য স্থানীয় কয়েকটি বাজার অথবা কৃষকের খামার ঘুরে দেখে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হবে।
তাছাড়া ছাগলের বাসস্থানের জন্য ঘর নির্মাণে কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে স্থানীয় মিস্ত্রীদের কাছ থেকে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। ছাগলের দাম ও ঘর নির্মাণের খরচের ধারণা নেওয়ার পর বিনিয়োগের টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
ছাগলের বাসস্থানের জন্য শুষ্ক, উচুঁ এবং বর্ষাকালে পানি জমে না এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া আশপাশের পরিবেশ খোলামেলা হতে হবে যেন সহজেই পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তাছাড়া পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রতি একজোড়া ছাগলের জন্য ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা, ১.৫ থেকে ২.৫ ফুট চওড়া এবং ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। ছাগলকে সরাসরি মাটিতে বা ফ্লোরে না রেখে কাঠ অথবা বাঁশের তৈরি মাচার উপর রাখতে হবে।
মাটি থেকে মাচার উচ্চতা কমপক্ষে ১ ফুট হতে হবে। ছাগলের মল-মূত্র নিষ্কাষণের জ্ন্য মাচায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি শীতকালে মাচার উপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। শীতকাল ছাড়াও বৃষ্টির দিনের জন্য বাসস্থানের চারপাশে চাদর বা ত্রিপাল দিয়ে আবৃত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেন ছাগলের ঘরে কিছুতেই বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে।
ছাগল লালন পালনের জন্য নির্মিত গৃহের চারপাশের বেড়া অত্যন্ত মজবুত হওয়া জরুরি। যেন কিছুতেই কোনো বন্যপ্রাণী কিংবা কুকুর শিয়াল আক্রমণ করতে না পারে। তাছাড়া খামার ঘরে যে কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকতে হবে।
খামারের আশপাশে কোন প্রকার বিষাক্ত গাছপালা যেন না থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। খামারের প্রবেশ পথে সব সময় জীবাণুনাশক মেশানো পানি রাখতে হবে। যে কেউ খামারে এলে জীবাণুনাশক পানিতে পা ধৌত করতে হবে।
ছাগলের স্বাস্থ্যের প্রতি সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। খামারের কোন ছাগল রোগাক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে সে ছাগলটিকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে এবং পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় পশু নিরাময় কেন্দ্র ও সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এসব নিয়ম মেনে ছাগল পালন শুরু করলে বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল হওয়া যাবে।