নয়াকৃষি ডেস্ক: গ্রামীন প্রান্তিক কৃষক হারুন মৃধা কথায় কথায় জানালেন, লেটুস চাষে তার সফলতার গল্প। কথা বলে জানা গেলো, হারুন মৃধা শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন জয়নগর ইউনিয়নের চর-খোরাতলা গ্রামের একজন দরিদ্র্য কৃষক। ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ তার পরিবারের মোট সদস্যসংখ্যা ৬ জন যার মধ্যে ১ মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি জানান পূর্বে সর্বমোট ১২০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন মৌসুমে সাধারণ সবজি যেমন- লাউ, টমেটো, করলা, চিচিংগা, শশা ইত্যাদি চাষের পাশাপাশি এগুলোর চারা তৈরী করেও বিক্রি করতেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও ফসল ফলাতে ব্যয় অনেক বেশী পরিমানে হওয়ায় বড় পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ তার পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিলো।
পিকেএসএফ এর অর্থায়নে এসডিএস বাস্তবায়িত পেইজ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিরাপদ পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। সবিস্তারে সবকিছু জানার ও বোঝার পর হারুণ মৃধা উচ্চমূল্যের সবজি চাষে আগ্রহী হন। এরপর তিনি নিরাপদ সবজি চাষের পরামর্শ, উঠান বৈঠক, নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এছাড়াও ভার্মি কম্পোস্ট তৈরী, কুইক কম্পোস্ট তৈরী, জৈব পদ্ধতিতে বালাই দমন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এই প্রশিক্ষন পাবার মাধ্যমে হারুণ মিয়া জানতে ও বুঝতে পেরেছেন, নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষের গুরুত্ব কতটা। এই পদ্ধতিতে খরচ কম, আয় বেশী এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশী দরকারী।
প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮ শতাংশ জমিতে উচ্চমূল্যের নতুন সবজি লেটুস চাষ করেন। উক্ত লেটুস চাষে তিনি ব্যবহার করেন জৈব সার, ভার্মি কম্পোস্ট। কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করেন সেক্স ফেরোম্যান ট্রাপ, হলুদ বোর্ড, ও কেরোসিন মিশ্রিত ছাই। তিনি প্রাপ্ত প্রশিক্ষন অনুযায়ী হাত ক্ষতিকর পোকার ডিম নস্ট, নিমপাতার গুড়ার সাথে সাবানের গুড়া মিশিয়ে জমিতে ব্যবহার করেন ফলে তাকে আলাদা করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। প্রকল্পের পক্ষ থেকে উক্ত লেটুস চাষের বীজ এবং অন্যান্য উপকরণ যেমন- ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার, ফেরোম্যান ট্রাপ, হলুদ বোর্ড প্রদান করা হয়েছে। ৮ শতাংশ জমিতে লেটুস চাষে তার খরচ হয় ৯,২০০ টাকা , মোট বিক্রি হয় ২৭,৫৮০ টাকা অর্থাৎ লাভ হয় ১৮,৩৮০ টাকা। এই টাকা দিয়ে জমির লিজ ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ বহন করেন।
হারুন মৃধার নিরাপদ পদ্ধতিতে এখনও উচ্চ মূল্যের সবজি চাষ করেন। তিনি এজন্য এসডিএস ও পেইজ প্রকল্পের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করেন।