নয়াকৃষি ডেস্ক: জয়পুরহাটে আলুর বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করেছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা, অপরদিকে আলুর দাম ভাল থাকায় খুশি কৃষকরাও।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র বাসস’কে জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে। উপজেলা ভিত্তিক আলু চাষের মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৬ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৮ হাজার ১০৬ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬১১ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমি। এতে জেলায় এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হয়ে থাকে। জেলায় এবার জাত ভিত্তিক আলু চাষের মধ্যে রয়েছে গ্র্যানুলা জাত ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর, এ্যাস্টেরিক জাত ১৩ হাজার ১৫৫ হেক্টর, কার্ডিনাল ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর, রোমানা ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডায়মন্ড ৪ হাজার ৭১০ হেক্টর, সাদিকা ৪৫০ হেক্টর, লেডিরোজেটা ৪৯৫ হেক্টর, ফেলসিনা ২৮০ হেক্টর, বারি-৮৬ ২০ হেক্টর, কারেজ ৩ হাজার ৯ হেক্টর ও মিউজিকা জাত হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫৫ হেক্টর। এ ছাড়াও স্থানিয় জাতের মধ্যে রয়েছে পাকড়ী জাতের ৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর, পাটনাই জাতের ৩০ হেক্টর ও হাগরাই জাতের রয়েছে ২৫ হেক্টর।
বর্তমানে জেলায় একদিকে চলছে আলু তোলা আরেক দিকে চলছে বোরোর চারা রোপণের কাজ ফলে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় আলু তোলার পরে লাগানো হয়ে থাকে বোরোর চারা সে কারনে জেলার সর্বত্র চলছে এখন আলু তোলার শেষের দিকে। আলুর ভাল দাম পাওয়ায় আশান্বিত হয়ে ওঠেন আলু উৎপাদনে বৃহত্তম জয়পুরহাট জেলার কৃষকরা। আলু লাগানোর পর মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া মোটামুটি ভাল থাকায় এবার কারেজ, গ্যানুলা জাতের আলুর হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে সাড়ে ২২ থেকে ২৪ টন পর্যন্ত। স্থানিয় জাতের লাল পাকরি, রুমানা জাতের আলুর হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ১৩/১৪ টন।
সদরের বানিয়াপাড়া এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, এবার ১ একর ১৬ শতাংশ জমিতে গ্যানুলা আলু চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
বাজারে বিভিন্ন জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ। এক বিঘা জমিতে এবার আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ১৩/১৫ হাজার টাকার মতো বলে জানান কৃষকরা। বাজারে বর্তমানে আলুতে ভরে গেছে। আমন ধানের দাম এবার ভাল ছিল আবার আলুর দাম ভাল পেয়ে কৃষকরা খুশি বলে জানালেন কোমর গ্রামের আলু চাষি শামছুল আলম।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে রাসায়নিক সারের কোন প্রকার সংকট ছিলনা জয়পুরহাটে। বিএডিসি উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ সরবরাহ করেছে। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন। আবহওয়া ভালো থাকায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। জয়পুরহাটের আলু উন্নতমানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯ টি দেশে রফতানি করা হয়েছিল। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। ফলন ভাল হওয়ায় জেলায় গ্র্যানুলা, কারেজ, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টেরিক, কার্ডিনাল ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন এ জেলার কৃষকরা। জেলার ১৫ টি কোল্ড স্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় বলেও জানায়, কৃষি বিভাগ।