নয়াকৃষি ডেস্ক: গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পান চাষ এবং উৎপাদন। বহু বহুকাল যাবত রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জীবিকার ক্ষেত্রে পান প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। চাষিরা সাধারন্যে ‘বরজ’ নামে পরিচিত পান চাষের ক্ষেত থেকে তাদের কাটা ফসল সরাসরি সাপ্তাহিক বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। সামগ্রিকভাবে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষ বেশি লাভজনক, কারণ কৃষকরা স্থানীয় বাজারে সহজেই এই অর্থকরী ফসল বিক্রি করার সুযোগ পান।
দুর্গাপুর উপজেলার বখতিয়ারপুর গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, এলাকায় দুই ধরনের পানের চাষ হয়- মিষ্টি পান ও সাঁচি পান। পানের মোট চাষের ৭০ শতাংশ মিষ্টি পান এবং এটি কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরণ।
মোহনপুর উপজেলার আরেক কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তার স্ত্রী ও তিনি ২১ বছরেরও বেশি সময় ধরে পান চাষ করছেন। জেলার বাগমারা উপজেলার চান্দাপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আলী তার এলাকার প্রথম পান চাষী হিসাবে এই অঞ্চলে একজন সফল কৃষক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর তিন ছেলে আমিনুল ইসলাম, আবদুল হামিদ ও আলী হোসেন তাঁর কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। পান চাষ করে লাভবান হওয়ায় আলী এলাকায় প্রথম পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। তার সাফল্য অনেক প্রতিবেশীকে সুপারি বাগান স্থাপনে অনুপ্রাণিত করে এবং তারা সবাই এখন অনেক ভালো করছে। বর্তমানে আলীর তিন ছেলে আলাদা বরজ বা পান বাগান গড়ে তুলে সফল কৃষকও হয়ে উঠেছেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, আগে তাদের খুব অল্প জমি ছিল এবং একটি মাত্র বাগান ছিল। এখন তাদের ১২ বিঘা জমি এবং চার থেকে পাঁচটি আলাদা বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, তারা কঠোর পরিশ্রম করে বেশিরভাগ সময় পান গাছের যত্নে সময় দিয়েছেন। যদিও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অল্প ছিল, কিন্তু তারা এখন তাদের উপার্জন দিয়ে তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর। আবদুল হামিদ জানান- বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাগমারার পানের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, অন্যান্য অনেক ফসলের তুলনায় পান চাষ অনেক লাভজনক। চাষাবাদ পদ্ধতি আরও আধুনিকায়ন করলে এক বিঘা জমি থেকে সহজেই দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ করে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। এই ফসলের নিট বার্ষিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা এবং ৪০ হাজারেরও বেশি কৃষক সরাসরি এর চাষের সাথে সম্পৃক্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে বলেন- মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও পবার মতো কয়েকটি উপজেলার ভূমি ও জলবায়ু সুপারি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে প্রায় ৬২৩.৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭৬ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার ৯০০ কৃষক ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। আগের মৌসুমে ৩৭ হাজার ৯৩২ জন কৃষক ৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমি ফসল চাষের আওতায় ছিল এবং তারা ৭৩ হাজার ৭৭১ টন ফলন পেয়েছেন। হোসেন আরো জানান, জেলার সব উপজেলাতেই পান চাষ হয়, তবে মোহনপুর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।