নয়াকৃষিঃ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভলপমেন্ট সোসাইটি) বাস্তবায়নে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগরে গ্রীষ্মকালে করলা চাষে নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে।
এ বছর (মার্চ-২০২২) প্রকল্পের প্রদর্শনী থেকে তিনি ১০ শতাংশ জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের করলা চাষ করেন দেলোয়ার খান। অথচ ৭-৮ বছর আগে এ মৌসুমে করলা চাষ করলেও গঙ্গানগরের কেউ আর এখন এই সময়ে করলা চাষ করেন না।তার এ কথা শুনে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে করলা চাষের জন্য তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী চারা উৎপাদন করে নেন তিনি।এরপর যে জমিতে চারা রোপন করেন সে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করেন। এরপর মালচিং পেপার বিছিয়ে তার মধ্যে নির্দিষ্ট দুরত্বে চারা রোপণ করেন। দুই সারির মাঝে একটা নিদিষ্ট সময় পানি রেখে দেন। এতে অতিরিক্ত তাপমাত্রার হাত থেকে চারা গুলো বেঁচে যায়। চারা গুলো একটু সবল হয়ে উঠলে চারার গোড়ায় স্বল্পমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন। গাছ বড় হয়ে গেলে জমিতে মাঁচা করে এরমধ্যে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ, হলুদ বোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি রোগবালাই আক্রমণ কমাতে ১৫দিন পরপর জৈব বালাইনাশক/বায়োপেস্টিসাইড প্রয়োগ করে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেন।
দেলোয়ার খান করলা চাষে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছেন তা তিনি সম সাময়িক অন্য সবজি থেকে আয় করতে পারেননি। প্রথম কিস্তি করলা ক্ষেত ভেঙ্গে তিনি অবার (আগস্ট’২০২২) ২৪ শতাংশ জমিতে করলা চাষ করেছেন। দেলোয়ার খানোর এ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার পাশের আরো ৭/৮ জন কৃষক এ বছর তার নিকট পরামর্শ নিয়ে করলা চাষ শুরু করেন। সবমিলে ১০শতাংশ জমিতে তার করলা উৎপাদন খরচ হয় ১২,০৫০ টাকার মতো যেখানে তার মোট বিক্রয় এর পরিমান ৪৬,৪৩৫ টাকারও বেশি। প্রথমদিকে দেলোয়ার খান প্রতি কেজি করলা বিক্রয় করেন ৫৫ টাকা দরে এবং শেষদিকে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০ টাকা। উৎপাদিত করলা নিজের পরিবারকেও খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মাঝেও বিনামূল্যে বিতরণ করেন। তিনি বলেন বিতরণকৃত করলা আনুমানিক বাজার মূল্য ১১৩০ টাকা।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভলপমেন্ট সোসাইটি) বাস্তবায়নে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া উপজেলায় PACE (পেইস) প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারণ ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয়বৃদ্ধিকরণ উপ-প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রল্পের সুবাদে সবজি চাষের নানা দিক নিয়ে কথা হয় দেলোয়ারের সাথে। আলাপকালে তিনি নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষের শুরুর গল্প জানান।
দেলোয়ার খান প্রথমদিকে বেগুণ, শসা, ধুন্দল,চিচিংগাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষ করতেন। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় ফলন ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর তাকে প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হতো। এতে করে ফলন একই রকম থাকলেও উৎপাদন খরচ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে ব্যয় বাড়ার সাথে আয় কমে যাওয়া এবং বছর বছর সার ও কীটনাশক ব্যবহার বৃদ্ধি তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
গঙ্গানগর বাজারে একদিন তার সাথে পরিচয় হয় এসডিএস এর PACE (পেইস) প্রকল্পের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খাইবুর রহমানের। তার কাছ থেকে দেলোয়ার খান নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর সংশ্লিষ্ট এ কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপদ সবজি চাষি কৃষক দলের সাথে অন্তর্ভূক্ত হন। এরপর কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সহ নিরাপদ সবজি চাষের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহন করেন। পাশাপাশি তিনি উঠান বৈঠক গুলোতেও নিয়মিত অংশগ্রহন করতে থাকেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তার নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু হয়।
শরীয়তপুর জেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চরগয়ঘরের বাসিন্দা মো: দেলোয়ার খান। বয়সে তরুণ। ৩০ বছর পেরিয়ে ৩১-এ পা দিবেন চলতি বছরের অক্টোবরে। বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিয়ে একই বাসার ছাদে বসবাস করেন তিনি। পরিবারে মোট সদস্য ১১জন। এর মধ্যে ৭জন-ই দেশের বাহিরে থাকেন। দেশে যারা আছেন তাদের মধ্যে উপার্জনকারী সদস্য ২জন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজের মধ্য দিয়েই শুরু হয় দেলোয়ার খানের কর্মজীবন। কৃষির সাথে তার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক।