নয়াকৃষি ডেস্ক: ইলিশ ও টুনা মাছের কৌটাজাতকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন শেকৃবির ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব এবং সহযোগী হিসেবে ছিলেন ওই অনুষদের ফিশিং এন্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা।
অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদিত ইলিশ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই ইলিশ যদি কৌটাজাত করে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তবে এখাত থেকে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যার সুফল রপ্তানিকারক থেকে প্রান্তিক জেলেরা পর্যন্ত পাবে। ‘শেকৃবিতে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিতে কৌটাজাত করা ইলিশের বিশেষত্ব হচ্ছে এই ইলিশের কাটা নরম হয়ে মাংসের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায় যে, এতে কাটা বেছে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। উপরন্তু নরম কাটা দেহে ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে কাজ করবে।’
টুনা মাছ সম্পর্কে মূখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, বাংলাদেশে টুনা মাছ ইলিশের মতো ততটা জনপ্রিয় নয়। আমাদের দেশের উপকূলীয় সামুদ্রিক এলাকায় প্রচুর টুনা ধরা পড়ে, যা বাজারে খুব কম দামে বিক্রি হয়। অনেক সময় ক্রেতার অভাবে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অযত্নে পড়ে থাকতে দেখা যায় টুনা মাছ। অথচ কৌটাজাত করা টুনা মাছ বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ কৌটাজাত করা টুনা ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের দেশের টুনাও কৌটাজাত করার একটা বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষও ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর হচ্ছে। তাই বর্তমানে রেডি-টু-ইট এবং রেডি-টু-কুক খাদ্যের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এক্ষেত্রে শেকৃবি কর্তৃক উদ্ভাবিত কৌটাজাত করার প্রযুক্তি এই চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রযুক্তিটি স্বল্প ব্যয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আয় বাড়াতে পারেন।
সহযোগী গবেষক মো. মাসুদ রানা বলেন, শেকৃবির ফিশ নিউট্রিশনাল বায়োলজি ল্যাবরেটরিতে উদ্ভাবিত কৌটাজাত করা ইলিশ ও টুনা মাছের স্বাদ, মান, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বকাল বাড়াতে গবেষণা এখনো চলমান।
সম্প্রতি ক্যানিং প্রযুক্তিতে তৈরি ইলিশ ও টুনা মাছের ক্যানের মুখ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রযুক্তিটি উদ্বোধন করেন শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য পরিচালিত গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের অধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প।