হাবিপ্রবি,দিনাজপুর: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ স্মরণে “বঙ্গবন্ধু, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল ১০.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম-২ তে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, লেখক, গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, সভাপতিত্ব করেন হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান। এ সময় বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. বলরাম রায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. ফাহিমা খানম, স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় দিবস পালন কমিটির সদস্য সচিব এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহাবুব হোসেন।
আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোছা. নুর-ই-নাজমুন নাহার। উক্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন, পাশাপাশি টিএসসি’তে ভার্চুয়ালি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতেই শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষ্যে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
ড. মুনতাসীর মামুন তার বক্তব্যে বলেন, ইতিহাস কখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। কিন্তু আমরা বার বার ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। নিজের গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোন ধর্ষিত হওয়ার যে তথ্য বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এ সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে আসলে কোনো গবেষণাই হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে মৌলিক কোন গবেষণা নেই। ‘পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে শক্তি আছে। আর কোথাও এটি পাবেন না। স্বাধীনতার এতো বছর পর ৩০ শতাংশ লোক যদি পাকিস্তানের পক্ষে থাকে, তাহলে কী হলো। আমরা কী রাজনীতি করলাম? আমরা পাকিস্থানি ভাবধারা থেকেও মুক্ত হতে পারছি না, ব্রিটিশদের থেকেও মুক্ত হতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫১ বছর বয়সে একটা রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে পারলেন অথচ আমরা কিছুই পারছি না। এর একটাই কারন তিনি যা ভেবেছেন তাই করেছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান তৈরির সময় জাতির পিতা ড. কামাল হোসেনকে দুটি বিষয়ে বার বার বলেছেন, তা হলো ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত করা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনবোধ, রাজনৈতিক দর্শন সর্বোপরি তাঁর রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে গবেষণাধর্মী ও তথ্যবহুল আলোচনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে শাহাদাত বরণকারী জাতির পিতার পরিবারের অন্যান্য সকল শহীদকে। তিনি বলেন, আলোচনা সভার সম্মানিত অতিথি মহোদয় অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় আজকের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুর উপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, এ জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম মূল মন্ত্রই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু নানা মত, নানা পথের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। এক্ষেত্রেও তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না”।