নয়াকৃষি: আনারস একটি সুস্বাদু ফল। শুধু তা-ই নয় এটি ভিটামিন এ, বি ও সি-এর একটি সেরা উৎস। আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি জাতের আনারস চাষ হয়। এসব জাতের মধ্যে হানিকুইন অন্যতম। এটি সবচেয়ে মিষ্টি আনারস। পাকা আনারসের শাঁস হলুদ রঙের হয়ে থাকে। চোখ সুঁচালু ও উন্নত হয়। এর গড় ওজন ১ কেজি।
জায়েন্টকিউ জাতের আনারসও বেশ ভালো। এর গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাঁটাবিহীন। পাকা আনারস সবুজাভ ও শাঁস হালকা হলুদ হয়ে থাকে। গড় ওজন ২ কেজি। চোখ প্রশস্ত ও চ্যাপ্টা। অন্যদিকে ঘোড়াশাল জাতের পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা হয়। এর চোখ বেশ প্রশস্ত। গড় ওজন ১.২৫ কেজি। এর পাতা কাঁটাযুক্ত, চওড়া ও ঢেউ খেলানো।
আনারস চাষের জন্য উপযুক্ত জমি ও মাটি বির্বাচন করতে হবে। এর জন্য উঁচু জমি ও পানি জমে না থাকে এমন জমি বাছাই করতে হবে। মাটি হতে হবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ। জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তেরি করতে হবে। এক বেড থেকে অন্য বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সেন্টিমিটার ফাঁকা রাখতে হবে।
মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত আনারসের চারা লাগানোর ভালো সময়। সেচ সুবিধা থাকলে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন পর্যন্ত আনারসের চারা লাগানো যায়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার হতে হবে।আনারসের সঙ্গে অনায়াসে আদা, সয়াবিন, সরিষা, কলাই, কচু ইত্যাদি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়।
গাছ প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ যথাক্রমে পচা গোবর ৩১০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৩৬ গ্রাম, টিএসপি সার ১৫ গ্রাম, এমওপি সার ৩৫ গ্রাম, জিপসাম সার ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও পটাশ সরি চারা রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সার বেড তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
শুকনো মৌসুমে আনারস ক্ষেতে সেচ দেওয়া দরকার। তাছাড়া বর্ষাকালে যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে। চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সেন্টিমিটার পরিমাণ রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে। আগাছা আনারসের খুবই ক্ষতি করে।
বছরে অন্তত দুবার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। একবার আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর ও দ্বিতীয়বার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। জমিতে সেচ প্রদান এবং সার প্রয়োগের পর মালচিং করে নিলে জমি আগাছামুক্ত থাকে। আগাছা দিয়ে মালচিং করার পর একসময় পচে জৈব সার হিসেবে মাটিতে যুক্ত হয় এবং এতে করে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।
চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য ভাদ্র মাসে সংগ্রহ করতে হয়।
পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত ট্যারেসিং বা কন্টুর পদ্ধতিতে (৬০ সেন্টিমিটার গভীর ও ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত) চাষ করা ভালো। পাহাড়ি এলাকায় জমি তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেনো না বেশি নাড়াচাড়া করলে ভূমি ক্ষয় হয়ে যাবে।
এমএমএফ/জেআইএম