নিউজ ডেস্ক: ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধন হল রবিবার। মঞ্চে দেখা গেল গানিম আল মিফতাহকে। দু’হাতে ভর দিয়ে মঞ্চে এসে অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের সঙ্গে সঞ্চালনা করলেন বেশ কিছু ক্ষণ।গানিম কাতার বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার। তিনি কোরানের শ্লোক আওড়ালেন। কে এই গানিম?
২০ বছরের গানিমের জন্ম থেকেই পা নেই। কডাল রিগ্রেশন সিন্ড্রোমে ভোগেন তিনি। খুব কম মানুষেরই এই রোগ দেখা যায়। কিন্তু সেই সব বাধা টপকে একাধিক মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন গানিম। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন কথা বলেন। তাঁর আইসক্রিমের ব্যবসাও রয়েছে।
রবিবার ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতালেন ঘানিম। তাঁর শ্লোক শোনালেন উপস্থিত দর্শকদের এবং সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের। কাতারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল সেই অনুষ্ঠানে। প্রথমেই দেখা যায় কাতারের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমকে। প্রথমে গানের অনুষ্ঠান হয়। তার পরেই বিশ্বকাপে ঐক্যের বার্তা শোনাতে শোনাতে হাজির হন হলিউডি অভিনেতা মর্গ্যান ফ্রিম্যান। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন বিশেষ ভাবে সক্ষম গানিম।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসর কাঁপানো গানিম আল মিফতাহর বিরল কীর্তি
ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে দু’হাতে ভর দিয়ে মঞ্চে এসে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন গানিম আল মিফতাহ। পরে অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের সাথে সঞ্চালনা করলেন বেশ কিছুক্ষণ। ঘানিম কাতার বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসর কাঁপানো কাতারের অলৌকিক শিশু বলে খ্যাত গানিম আল মিফতাহ (Ghanim Al-Miftah) ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পবিত্র ওমরা পালন করে। তখন তার বয়স ছিল ১৫। এক বিরল ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণকারী গানিম সারাক্ষণ হুইল চেয়ারে চলাফেরা করলেও তার মনে প্রবল ইচ্ছা ছিলো পবিত্র কাবা তাওয়াফ করার ও হাজরে আসওয়াদ চুমো দেওয়ার। কিশোর গানিমের সেই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে।
দুই পা ছাড়া এক চতুর্থাংশ শরীর নিয়ে জন্ম গানিমের। হুইল চেয়ারে করে চলাচল করে সে। কিন্তু সে অসম্ভব মেধাবী। তার নিজের নামে একটি দাতব্য সংস্থা, স্পোর্টস ক্লাব এবং আইসক্রিম পার্লারও আছে। তার দাতব্য সংস্থা থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের নানাভাবে সহায়তা করা হয়। কাতারের মানুষ গানিমকে আশা, দৃঢ়সংকল্প এবং দানশীলতার প্রতিমূর্তি হিসেবে জানে। শারীরিকভাবে অক্ষমতা সত্ত্বেও নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে গানিম মনে জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করার নীতিকে বিশ্বাসী। তাই তার নাম হয়েছে ‘অলৌকিক শিশু।
সেই গানিমের ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসেন সৌদি আরবের পর্যটন এবং জাতীয় ঐতিহ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিন্স সুলতান বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ। তিনি গানিমের ওমরা পালনের ব্যবস্থা করেন। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কাবা শরিফ তাওয়াফসহ ওমরার অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনে তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মক্কায় পৌঁছার পর একটি বিশেষ টিম গানিম ও তার পরিবারকে ওমরা পালনে সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করে।
পবিত্র মক্কায় গানিমকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রিন্স সুলতান নিজে। এ ছাড়া মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম শায়খ মাহের আল মুয়াইকলির পেছনে গানিমদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাওয়াফের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গনে এসে গানিম আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে। সে হুইল চেয়ার ছেড়ে দিয়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে তাওয়াফ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে এবং হুইল চেয়ার ছাড়া শুধু দুই হাতে ভর দিয়ে কাবা শরিফের তাওয়াফ সম্পন্ন করে। তাওয়াফের পর গানিমের বাবা তাকে কোলে উঠিয়ে হাজরে আসওয়াদ চুমো দিতে সাহায্য করেন।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি ২০১৭) মাগরিবের নামাজের সময় গানিম কাবা শরিফ তাওয়াফ করে। তার তাওয়াফের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের পর বেশ সাড়া পড়ে। গানিম হাতের ওপর ভর দিয়ে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতে পারায় ভীষণ খুশি। এমন সুযোগ প্রদানের জন্য গানিম প্রিন্স সুলতান, মসজিদে হারামের ইমাম শেখ মাহের, চাচা ইউসুফ আল মারজুকসহ মক্কা পর্যন্ত আসতে ও তাওয়াফ করতে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গানিম বলেন, আল্লাহতায়ালা আমার প্রার্থনা শুনেছেন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে উমরা পালন এবং হাতের ওপর ভর করে কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে সক্ষম হয়েছি।