অনিল চন্দ্র রায়,ফুলবাড়ীঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরা লসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিরা সাধারণত রবি শস্যের উপর নির্ভরশীল। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরা লসহ বিভিন্ন এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা কোন জমি আর পতিত নেই বিস্তৃর্ণ কৃষকের মাঠে মাঠে দু-চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। যেন চারিদিকে বেগুনের সবুজ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। এখন মাঠ জুড়ে সবুজ রঙে সাজিয়ে তুলিছে প্রকৃতির অপরুপ রুপ। চলতি খরিপ-১ মৌসুমে বেগুনের বাম্পার ফলন ও টানা ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও গত দুই দিন বেগুনের একটু দাম কমায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তারপরেও কোন কৃষক ঘরে বসে নেই।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা ক্ষেতের বেগুন বিক্রি করাসহ বেগুন ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। বেগুন চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। তাই গত বছরের চেয়ে চলতি খরিপ-১ মৌসুমে ব্যাপক হারে চাষিরা বেগুন চাষ করছেন। যে সব চাষির নিজস্ব জমি নেই তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ স্বচ্ছল ভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। অধিক লাভের আশায় এ অ লের কৃষকরা প্রতি বছরেই আগাম বেগুন চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। অ লের কৃষকরা বেগুন চাষের পাশপাশি সারা মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের সবজির আগাম চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। এ সব চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের শত শত কৃষক পরিবার।
এবছর হঠাৎ করে জ্বালালি তেল, রাসায়নিক সারসহ কীট নাশক ওষধের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় এবারের বেগুন চাষিদের হতাশা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১ মাস থেকে চাষিরা ক্ষেতের বেগুন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মন বিক্রি করলেও গত দুই তিনদিন ধরে বেগুনের দাম কমায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি করছেন স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের কাছে। জেলার অন্য উপজেলার তুলনায় ফুলবাড়ী উপজেলায় বেগুনসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বেগুনসহ সব ধরণের সবজির চাষা ব্যাপক পরিমানে চাষাবাদ হয়। তবে এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুন চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হওয়ার কারণে বেগুনের দাম কম থাকায় চাষিরা একটু দুচিন্তায় পড়েছেন।
কুরুষাফেরুষা এলাকার বর্গা চাষি ঈশা মিয়া জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমি ১ বছরের জন্য ৩৮ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে আগাম বেগুন চাষ করেছে। তিনি গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে মানুষের জমি বর্গা নিয়ে বেগুনসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষা করে আসছেন। তিনি আরও জানান, প্রতি বছর বেগুন চাষ কওে লাভ হয়েছেন। এবছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল,সার কীটনাশক ঔষধসহ দিন মজুরের মূল্য বাড়ায় খরচ দিগুন হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধওে বেগুনের মন ১৬০০ থেকে ১৭০০ বিক্রি করলেও গত তিনদিন থেকে বেগুনের দাম কমে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম না বাড়লে বড় লোকসানের আশংকা করছে এই চাষি।
একই এলাকার বেগন চাষি মনছার আলী ও পুলিল চন্দ্র রায় জানান, এবছর আবহাওয়া ভাল থাকায় বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে প্রায় টানা ১ মাস বেগুনের দাম ভাল ছিল। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা আরও জানান প্রতি বিঘায় বেগুন রোপন করতে খরচ হয় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বেগুন ক্ষেতে রোগ মুক্ত ও আবহাওয়া অনুকুলসহ বেগুনের ভাল দাম থাকলে ১ বিঘায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। সেই যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর কৃষিতে খরচের পরিমান বেশি হচ্ছে। সব জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুন। সেই সামান্য রোগও দেখা যাচ্ছে। তবে বেগুনর মন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা থাকলে আমরা বেগুন চাষি লাভবান হতে পারবো।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিমফুলমতি এলাকার বেগুন চাষি রফিকুল ইসলাম ও সহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা কুষি অফিসের পরামর্শে প্রতি বছর বেগুনের চাষ করেছে। এবছর তারা প্রত্যেকেই দুই থেকে তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চাষাবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় বেগুনের ফলন ভাল হয়েছে। তারা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতের বেগুন বিক্রি শুরু করবেন বলে জানান।
একই এলাকার মন্টু বর্মন, রোস্তম আলী ও হাসেম আলী জানান, আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবছর বেগুনের বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেগুন বিক্রি শুরু করতে পারবো। তারা আরও জানা, আপাতত বেগুনের বাজার দর কম। আশা করছি বেগুনের দাম বাড়বে। যদি বেগুনের দাম না বাড়ে থাহলে লাভতো দুরের কথা লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চাষিদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সহযোগীতা দেওয়ায় এ অ লের চাষিরা বেগুন চাষে ঝুঁকছেন। এ অ লের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি খরিপ-১ মৌসুমে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করেছে। অধিকাংশ কৃষক বেগুন বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। প্রায়এক মাস থেকে বেগুনের দাম ভাল ছিল। গত দুই তিদিনে একটু দাম কমলেও চাষিদের লোকসান হবে না। বরং বেগুন চাষিরা অধিক লাভবান হবেন। এ দিকে শীত মৌসুমের জন্য চাষিরা আগাম বেগুনের চারা রোপনসহ ১০ হেক্টর জমিতে আগাম বেগুনের চাষাবাদ করেছে ।