জহিরুল ইসলাম প্রতিনিধি, জুড়ী (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলায় সমতল ও উঁচু নিচু পাহাড়ে চাষ হয় সিলেটের বিখ্যাত সবুজ কমলা। রয়েছে ছোট বড় মোট ৮৫ টি কমলা বাগান।বিগত দুই বছর পর্যাপ্ত পরিমানে ফল আসলেও পানির অভাবে গাছ থেকে ঝরে যায় ফুল।চরম হতাশায় কমলা চাষিরা।এর পেছনে মূল কারণ যখন কমলার ফুল আসতে শুরু করে তখন তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়ে। এতে ঝরে যায় ফুল ও খুদে ফল। শুধু কমলা নয় আদা (জামির) লেবু, বাতাবিলেবু, জাড়া লেবু, সাতকড়া, করুন, কাঁটা, মাল্টা সহ বিভিন্ন জাতের লেবু জাতীয় ফল।
কমলা সহ সিলেটের বিখ্যাত এসব ফসলের আবাদ হয় জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলা, লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, ডোমাবাড়ী ও কচুরগুল এলাকায়। এলাকার স্থানীয় বেশ কয়েকজন কমলা চাষীদের অভিযোগ দিন দিন কমছে আমাদের কমলার উৎপাদন। তবে কেন? জানতে চাইলে জয়নুল মিয়া নামে একজন বলেন, বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে খাপ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্য কমলা চাষের মতো পেশায় সময় দিয়ে এখন আগের মতো জীবিকা চলে না। আর এখন আরেকটি সমস্যা তীব্র খরা। ফল আসলে আবার বিষাক্ত পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা কঠিন। এসব সমস্যার কথা বলেছেন কমলা চাষিরা।
এবছর সময় মতো বৃষ্টি হয় নি। তীব্র খরার কারণে কমলার ফুল ঝরে যাচ্ছে! এতে বিগত বছর মতো এবার ও কমলার উৎপাদন অনেক কম হবে। তিনি আরও বলেন, যখন কমলা গাছে ফুল আসে তখন প্রয়োজন হয় পানির। গাছে পানি দেওয়ার মতো স্বাদ্য আমাদের নেই! এবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সেচ দিতে না পারায় কমলার ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, মূল সমস্যা প্রকৃতিক ভাবে খরা। কোন ভাবে সময়মত সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলন ভালো হবে। প্রতি বছর কমলা বিক্রি করে মোটামোটি লাভ হলেও এবছর কামলা চাষে গত বছরের মতো ফল শূন্য হবে। ফলে আমরা কমলা চাষিরা পড়েছি দ্বিধায়।
ডোমাবাড়ী এলাকার প্রবীণ কমলা চাষি সফিক উদ্দিন বলেন, এই মৌসুমে বৃষ্টি না হলে মানুষের খাওয়ার পানি সংকট দেখা দেয়। আর লেবুজাতীয় ফসল টিকানো তো কঠিন! গভীর নলকুপ হলে পাম্প দিয়ে যদি সেচের কোনো ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এমন খরায় হয়তো কমলার ফল টিকবে। আর না হয় লেবু জাতীয় ফসল দিন দিন যেভাবে কমছে এক সময় শেষ হয়ে যাবে।
রুপাছড়া গ্রামের কমলা চাষী তোফায়েল আহমদ বলেন, প্রতি বছর যখন কমলার ফুল আসে তখন এই মৌসুমে কোন বৃষ্টিপাত হয় না। এ সময় পানির স্থর অনেক নিচে নেমে যায়। মূলত পানির অভাবে ফুল ঝরে যায় এবং কোন কোন গাছ মারা যায়। প্রতি বছর এসব সমস্যার কথা তুলে ধরলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সেচ ব্যবস্থা করে দিবে আশ্বাস দিলেও কাজের কোন ফল পাওয়া যায় নি। নতুন করে বাগান তৈরি করতে গেলেও বাধা, দেখা যায় নতুন গাছে প্রথম ফল আসতেই পরের বছর মারা যায়! এতে নতুন কোন বাগান তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকৃত কৃষকরা সব সময় চায় কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। এভাবে একের পর এক সমস্যার সম্মুখিন হলে কমলা চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারি ভাবে কমলা বাগানে সেচের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোন সুযোগ সুবিধা নেই। তবে ব্যক্তিগত ভাবে পানির বোতল ছিদ্র করে গাছের গোড়ায় সন্ধ্যার সময় রাখলে কিছু পানির তৃপ্তি পূরণ হবে। কারণ কমলার ফুলের মৌসুমে এই এলাকায় পানির খুব সংকট হয়। এটি মোকাবেলা করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধি অবলম্বন করতে হবে। এতে একেবারে ফুল ঝরে যাওয়ার চেয়ে কিছুটা রক্ষা হবে।
লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রারণ উৎপাদন ও কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, দেশে ভিটামিন-সি’র চাহিদা পূরণের জন্য লেবুজাতীয় ফসলে গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে লেবুজাতীয় ফসলের সেচ এর জন্য এই প্রকল্পে কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে জুড়ীর যে এলাকায় কমলার আবাদ হয় এই এলাকায় পানির তীব্র সংকট। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কিভাবে কৃষকদের সেচের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। সে বিষয়ে আমরা প্রদক্ষেপ নেব। সেচের কোন ব্যবস্থা হলে আগে জুড়ীর পাহাড়ী এলাকায় কমলা বাগানে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেব।