নয়াকৃষিঃ সবজি চাষে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারে আয় বেড়েছে শরীয়তপুরের নিরাপদ সবজি চাষীদের। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদের মাঝেও।
জানা যায়, ২০১৭ সালের মে মাসে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারণ ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয়বৃদ্ধিকরণ উপ-প্রকল্পের আওতায় জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় সাধারণ ও উচ্চমুল্যের সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট ,অনুজীব, ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কাজ শুরু করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি)।
প্রকল্পের আওতাভুক্ত সদস্য ভেদরগঞ্জ উপজেলাধীন কাচিকাটা এলাকার নিরাপদ সবজি চাষী জাহাঙ্গীর বেপারী জানান, আগে আমরা যখন সবজি চাষ করেছি তখন এসব প্রযুক্তি ছিলো না (ফেরোমন ও হলুদ ফাদ)। আমরা সার, বিষ দিয়েই সবজি চাষাবাদ করতাম তখন আমাদের ফসল ফলাতে খরচ বেশি হতো এবং লাভ কম হতো। সাইদুল ভাইয়েরা (এভিসিএফ, পেইজ প্রকল্প, এসডিএস) আসার পর আমরা জমিতে কেঁচো সার, তাবিজ (সেক্স ফেরোমন ফাদ), হলুদ কাগজ (হলুদ বোর্ড) ব্যবহার করছি। এতে আমাদের অন্যান্য সার- ওষুধ কম দেয়া লাগছে এবং ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে অনেক টাকা লাভ হয়।
জাহাঙ্গীর বেপারী আরও জানান,, আগে ১৫ শতক জমিতে চিচিংগা করতে আমার খরচ হতো ১১ হাজার ১৬৮ টাকা আর এখন খরচ হয় ৮ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তার শুধুমাত্র উৎপাদন খরচ কমেছে ২ হাজার ২৬৮ টাকা।
প্রকল্পের অন্য এক সদস্য জাজিরা উপজেলার চর গয়ঘরের নিরাপদ সবজি চাষী মোঃ দেলোয়ার খান জানান, ৫-৬ বছর আগে ১০ শতক জমিতে করলা চাষ করে ফলন পাইছি ১০৭০ কেজির মতো। তারপর আর এই সময়ে (গ্রীষ্মকাল) করলা চাষ করি নাই। ২০২০ সালের দিকে এসডিএস এর ভাইয়েরা আমাদের এখানে এসে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকে। তাদের পরামর্শে আমি জমিতে কেঁচো সার, তাবিজের বয়াম (ফেরোমন ফাদ), হলুদ পেপার (হলুদ বোর্ড) ব্যবহার শুরু করি। ভাইদের পরামর্শেই এ বছর করলা চাষ করেছি এতে ফলন আগের চেয়ে ১০৪ কেজির মতো বেশি হয়েছে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ছিল। সে কারনে ফেরোমন /হলুদ ফাদ ব্যবহারের আগে ৬-৭ বার স্প্রে করলেও এবার মাত্র ২-৩ বার ওষুধ স্প্রে করতে হয়েছে।
এসডিএসের কৃষি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আগে এ অঞ্চলে সবজি চাষে অত্যধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতো কৃষকেরা। এতে করে তাদের যেমন উৎপাদন খরচ বেশি লাগতো তেমনি মাটির উর্বরতা, পুষ্টিগুনাগুন কমে যেত,পরিবেশ দূষিত হতো। ফলে ফসল ফলানোর জন্য বছর বছর তাদের সার এবং কীটনাশকের মাত্রা বাড়াতে হতো। আমরা সে বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে পিকেএসএফ অর্থায়নে PACE প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার কৃষক-কে নিয়ে নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারণ ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয়বৃদ্ধিকরণ উপ-প্রকল্পের কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ এ অঞ্চলের জন্য নতুন প্রযুক্তি হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রকল্পভুক্ত কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের হাতে কলমে নিরাপদ সবজি চাষ পদ্ধতি শেখানোর চেষ্টা করি। এছাড়া নিরাপদ সবজি চাষের উপকরণের (হলুদ ফাদ, সেক্স ফেরোমন ফাদ, বায়োপেস্টিসাইড /জৈব বালাইনাশক, জৈবসার) সহজলভ্যতা বাড়াতে উপকরণ বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ,পরামর্শ প্রদান ও বাজার সংযোগ সভা করা হয়। অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে কৃষি উদ্যোক্তাদের দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো-কম্পোস্ট, অনুজীব, কোকোপিট নার্সারীতে সবজি চারা উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, কৃষকেরা আমাদের পরামর্শ মেনে এখন সবজি চাষাবাদ করছেন ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমেছে,মাটির উর্বরতা-পুষ্টিগুণ কিছুটা বাড়ছে। একারনে ফসল উৎপাদন তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশাপাশি কৃষকেরা কম খরচ করে বেশি আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।