নয়াকৃষি: বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই)- এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ ‘জিনোম এডিটিং’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির বই মেলা সংলগ্ন অফিসে উক্ত বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক ও মাতৃভাষা প্রকাশের প্রকাশক নেসার উদ্দীন আয়ূব এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি প্রফেসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সেক্রেটারি ড. হাসিনা খান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান, ঢাকা ট্রিবিউন এর নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম. রেজাউল হাসান প্রমুখ।
ইউজিসি প্রফেসর ড. হাসিনা খান বলেন, অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম অত্যন্ত গবেষণা প্রিয় একজন মানুষ। তিনি সব সময় নিজেকে বিভিন্ন গবেষণার কাজে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন। ২০১৫-১৬ সালে যখন গমের ব্লাস্ট রোগ বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম বিনাশ করে। তখন সারাদেশে হইচই পড়ে যায়, মানুষের মধ্যে গমের আবাদ নিয়ে শংকা দেখা দেয়। সেই সময় একদল বিদেশী গবেষক-কে সাথে নিয়ে তোফাজ্জল ইসলাম গমের ব্লাস্ট রোগের জীবানু নির্ণয়ে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে দ্রুত সময়ে ব্লাস্ট নির্ণয়ের কীট এবং অত্যাধুনিক ক্রিসপার কাস-৯ জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনোম এডিটিং এর মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরিতে কাজ করে। যার ফলশ্রুতিতে গমের আবাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসে। সুতরাং জিনোম এডিটিং এমনই একটি বিষয় যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, গত ৫০ বছরে ধান, ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা, ক্যানোলা, পেঁপে ইত্যাদির বিপুলসংখ্যক ফসলের জাত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি দ্বারা উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ব্যাপক অবদান রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে জিএম ফসল চাষ করা হয়। কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জীবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জিনোম এডিটিং, ন্যানোটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি। আমি মনে করি, তোফাজ্জল ইসলামের বাংলা ভাষায় রচিত এ বইটি ভবিষ্যত কৃষির উন্নয়নে শিক্ষক,শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমি লেখক এবং বইটির উত্তরোত্তর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলি, ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশের কথা বলি, এসব আকাঙ্ক্ষা তখনই পূরণ হবে, যখন আমরা কৃষিতে টেকসই হব। আজ বিভিন্ন সূচকে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ভিত্তি হলো কৃষি। বায়োটেকনোলজি আমাদের কৃষি সম্প্রসারণে সহযোগিতা করেছে। কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কী করতে হবে, সেটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। ভবিষ্যতের কৃষিতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যের নিরাপত্তা, টেকসই ও দায়িত্বশীল কৃষি। দায়িত্বশীল কৃষি মানে আমাদের বায়োটেকনোলজির দিকে যেতে হবে।আমাদের সম্পদ সীমিত। এই সীমিত সম্পদ দিয়েই অনেক বেশি উৎপাদন করতে হবে। খোরপোশ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে উত্তরণ করতে হবে। কৃষিকে আরও আধুনিক করতে হবে।
বইটির লেখক অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি সম্পর্কিত অনেক বই ইংলিশে বাজারে পাওয়া যায়, কিন্তু এ সকল বই আমাদের দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অনায়াসে বুঝতে পারা কিছুটা দুরূহ ও দুঃসাধ্য। জীব প্রযুক্তির এই কঠিন ও জটিল বিষয়গুলোকে সহজ এবং বোধগম্য করে তুলতে জিনোম এডিটিং নামে বইটি মাতৃভাষা বাংলায় রচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় লিখিত এ বইটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং আধুনিক বিজ্ঞানপ্রেমী সকল শ্রেণির পাঠকের চাহিদা কথা বিবেচনা করে লিখার চেষ্টা করা হয়েছে। জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে জীবপ্রযুক্তিকে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত প্রযুক্তি গুলোর মধ্যে জিনোম এডিটিং গুরুত্বপূর্ণ। আবিষ্কারের ইতিকথা এবং মানব কল্যাণে এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োগ নিয়ে বইটি সাজানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বইটি প্রকাশ করেছে মাতৃভাষা প্রকাশ। একুশে বই মেলার ‘মাতৃভাষা প্রকাশ’ এর ১৩৪-১৩৬ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে বইটি।