এম আব্দুল মান্নান: টুঙিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সংসদের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সোনিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো-২০২১ প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন ও আরমা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।
রবিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে টুঙিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ই আগস্ট নিহত সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনূষ্ঠিত হয়। এসময় দেশের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ শাহাদত বরণ করেন বঙ্গবন্ধু । যা ছিল বাঙালির ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়।
এনায়েতউদ্দিন মোঃ কায়সার খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে মূলত মুক্তিযুদ্ধের মূল পর্ব সুচিত হয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ডাক না দিতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হতে পারতো না। তিনি যেভাবে সমগ্র বাঙালিকে হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে একত্রিত করেছিলেন দ্বিতীয় আর কেউ সেটি করতে পারেননি এবং পারবে বলেও মনে হয়না। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমি ও আমার বড় ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান (খুররম) বাসা থেকে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নানার বাড়ি ভৈরবে চলে যাই এবং সেখানেই তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৫ এপ্রিল ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্যাবর জেট বিমান দিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে থাকে এবং সেই সঙ্গে ভারী অস্ত্রধারী সেনাদের হেলিকপ্টারে করে নামিয়ে দেয়। এসময় পাকসেনাদের সঙ্গে আমাদের তুমুল যুদ্ধ বেঁধে যায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে চোখে গুলি লাগে আমাদের এক সহযোদ্ধার। তাকে নিয়ে আমি নদীর পাড় ঘেঁষে হেঁটে হেঁটে পাশের একটি গ্রামে গিয়ে উঠি। সে সময় আমাদের কাছে বিমান ভূপাতিত করার মতো কোন অস্ত্র না থাকায় কৌশলগত কারণে ক্যাপ্টেন নাসিম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দলের সৈনিক এবং যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পশ্চাৎপদ করেন। ততক্ষণে হানাদার বাহিনীর নিক্ষিপ্ত বোমা ও বুলেটে বড় ভাউ খুররমসহ মুক্তিবাহিনীর অনেকেই শাহাদত বরণ করেন।
কায়সার খান আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় একটি বিস্ময়কর এবং ব্যতিক্রমী ঘটনা। যার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর ত্যাগের ইতিহাস। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়ে একজন শহীদের পরিবার হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতি, শোষণ-,নিপীড়ন মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার অর্ধ-শতাব্দীকাল পেরিয়েও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ না হওয়ার দুঃখবোধ রয়েছে। তবে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।