নয়াকৃষিঃ আমাদের দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোয়েল পালন। অনেকে কোয়েল পালন করে উদ্যোক্তা হতে চান। তবে কোয়েলের খামার করতে গেলে কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে। কোয়েল পালন করতে গেলে প্রথমে এর আবাসন, খাবার, কোয়েলের সুস্থতা ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। শুরুতে জানা যাক কোয়েল পাখির আবাসন নিয়ে। কোয়েল পাখি অবশ্যই খাঁচায় পালতে হবে। প্রতি বর্গফুটে ৮টি পাখি পালন করা যায়।
কোয়েল পালনে ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তবে সেটি সঠিক নিয়মে করতে হবে। লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের অসুবিধা ও খাঁচায় কোয়েল পালনের সুবিধাগুলো জানতে হবে।
লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করলে কোয়েলের অনেক রোগ হয়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগ হলো আসিরিটিভ এনটিরিটিস বা কোয়েল ডিজিজ। অনেক সময় বোঝা যায় না কিভাবে এ রোগটি হলো। এ রোগ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব কোয়েল পাখি মরে যাবে।
দ্বিতীয়টি হলো কৃমি। এতে আক্রান্ত হলে কোয়েল পাখি মরবে না। তবে ডিম দেওয়া কমে যাবে। ধীরে ধীরে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিছুদিন পর মারা যাবে। আরেকটি সমস্যা হলো পাখির আমাশয়। যেহেতু পাখি সবসময় লিটার বা নিজেদের বিষ্ঠার উপর থাকবে সেহেতু আমাশয় হবে। ওষুধ খাওয়ালে ভালো হবে কিন্তু ততক্ষণে ডিম দেওয়া কমে যাবে।
চতুর্থ সমস্যা হলো চোখ ফুলে যাওয়া। পাখির বিষ্ঠা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বের হয় এর ফলে অনেক সময় চোখ ফুলে যায়। বাতাস ঠিক মতো চলাচল করলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ততক্ষণে ডিম দেওয়া কমে যাবে। লিটারে ফাঙ্গাস হতে পারে- যা খেলে কোয়েল বাঁচবে না।
এ ছাড়া কোয়েল পাখি উড়ে। উড়তে গিয়ে কখনও ডিমের উপর গিয়ে পড়ে, ফলে ডিম ভেঙে যায়। এতে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। পক্ষান্তরে যদি কোয়েল পাখি খাঁচায় পালন করা হয় তাহলে কোনো রোগ হবে না বলা যায়, এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বার্ডফ্লু দেখা দিলেই পাখি মারা যাবে।
তবে খাঁচায়তেও কোয়েল মারা যায়, তবে সেটা রোগে নয়, খাঁচার নেটে ভেতর মাথা ঢুকিয়ে ও খুঁচিয়ে নেট এর ফাঁকে পা আটকে যায় এসব কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাখি মারা যায়। তবে সেটা খুবই নগণ্য। খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করলে ব্যবসা শুরুকালীন বিনিয়োগ বেশি হবে।এখানে উল্লেখ্য যে, পাখির ঘর বা খাঁচা স্থাপন করতে হবে উঁচু স্থানে। খাঁচার ছাউনি এবং চারপাশে নেট যাতে বাতাস চলাচলে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।
কোয়েল পাখির খাবার বিষয়ে বেশ যত্নবার হতে হবে। যদি পাখিকে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয় তাহলে খাঁচায় পালন করলেও কোয়েলের আমাশয় বা পেটে সমস্যা দেখা দেবে। ভ্যাকসিন দিলে হয়তো সুস্থ হবে কিন্তু ততক্ষণে পাখির ডিম দেওয়া কমে যাবে। তাই খাবার কেনা সময়ে যাচাই-বাছাই ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কোয়েল পালনে পাখির সুস্থতার প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। পাখি যদি অসুস্থ থাকে তাহলে পাখি সাধারণত ডিম পাড়ে না। লিটারে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই খাঁচায় পালন করা ভালো।