নয়াকৃষি ডেস্ক: সমাজ ও পরিবারের বোঝা না হয়ে গরু পালন করে লাখোপতি হয়েছেন কুড়িগ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফাহিম ফেরদৌস। নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পথ তিনি বেঁচে নেন।
ফাহিম ফেরদৌস কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজা গ্রামের দিনমজুর ফজলার রহমানের ছেলে। প্রতি বছর ৩ থেকে ৪টি গরু বিক্রি করার পরও এখন তার খামারে রয়েছে ৬টি গরু। বর্তমানে গরুগুলোর দাম প্রায় তিন লাখ টাকা। আলোহীন চোখে বেকার না থেকে ফাহিমের সারদিন কাটে খামারের কাজে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজা গ্রামের দিনমজুর মো. ফজলার রহমানের ছেলে ফাহিম ফেরদৌস ( ২২)। বাবার অভাবের সংসারে তিনভাই বোন মিলে কষ্টে দিন কাটে তার। বাকি ভাই বোন লেখাপড়া শিখলেও অন্ধ ফাহিমের কাটে বন্ধ ঘরে। সাত বছর বয়সে দুচোখের দৃষ্টিশক্তি হারায় ফাহিম ফেরদৌস।
উন্নত চিকিৎসার অভাবে আর ফিরে পায়ননি চোখের আলো। তার বয়স এখন ২২ বছর। সন্তানের ভবিষ্যৎ আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়ের কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ। ফাহিম বাবা-মায়ের কাছে আবদার করে একটি গরু কিনে দেওয়ার জন্য। সন্তানের কথা মতো অনেক কষ্টে একটি গরু কিনে দেন বাবা দিনমজুর ফজলার রহমান। একটি গরু থেকে ফাহিমের খামারে এখন ৬টি গরু।
ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় ফাহিমের ব্যস্ততা। গরুকে খাবার দেওয়া, গোসল করানো, অসুস্থ গরুর সেবা করা, খড় কাটা এসব করেই তার দিন কাটে। এছাড়া মায়ের কাজেও সহযোগিতা করে সে। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও সমাজের আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করে সে। তার খামার থেকে প্রতি বছর ৩-৪টি গরু বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেন ফাহিম।
এখন তিনি আর পরিবারের বোঝা নন। ফাহিম এখন তিন ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি।
ফাহিম ফেরদৌস বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে গরুর দেখাশোনা শুরু হয়। গরুকে খাবার দেওয়া, খড় দেওয়া মায়ের কাজে সহযোগিতা করে সময় কাটে। আমি অন্ধ হলেও মায়ের ভালোবাসা সহযোগিতায় এতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। মা না থাকলে হয়তো ভিক্ষা করে খেতে হত।
ফাহিমের মা ফাহমিদা বেগম বলেন, ফাহিম অন্ধ হলেও ওর চলাফেরা অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিক। যেকোনো কাজ একবার বুঝিয়ে দিলে সে সহজে বুঝতে পারে।
আমরা ফাহিমকে ১টি গরু কিনে দিয়েছি সেখান থেকে সে ভালো আয় করতে পারছে। আমি দোয়া করি কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়। ফাহিমের আয়ের টাকা দিয়ে ওর চোখের চিকিৎসা হবে। সে দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে।
প্রতিবেশী আমেনা বেগম বলেন, ফাহিম ভালো ছেলে। সে সারাদিন পরিশ্রম করে। আমরা সবসময় ফাহিমের মঙ্গল কামনা করছি। ফাহিমকে দেখে এলাকায় আরো ৪-৫ জন খামার করে ভালো আয় করতে পেরেছে।
বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করে ফাহিম সুনাম কুড়িয়েছে। খামার প্রসারে ফাহিমের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে গরুর খামার করে ফাহিম যে কাজটি করেছে এর জন্য শুভকামনা জানাই। ফাহিমের মতো এভাবে উদ্যোক্তা তৈরি হলে বেকারত্ব নির্বাসনে যাবে। আমাদের দপ্তর থেকে ফাহিমকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।